হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চারটি চা বাগানে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনকভাবে নিলামে চায়ের বিক্রয় মূল্য কমতে থাকায় বাগান মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

গত বছরের প্রথম দিকে নিলামে চায়ের প্রতি কেজি গড়ে ২০০ টাকা হলেও শেষ দিকে নিলামে দাম কমে ১৪০ টাকা হয়েছে।

১ কেজি চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২০০ টাকা। এ কারণে মাধবপুর উপজেলার চারটি চা বাগান লোকসানের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।

করোনা মহামারির মধ্যে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস, বিদেশে চায়ের রপ্তানি কমে যাওয়া ও চায়ের নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় চায়ের দর কমেছে বলে বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান।

২০২১ সালে নোয়াপাড়া চা বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার কেজি। ২০২০ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি।

২০২১ সালে বেশি চা উৎপাদন হলেও নিলাম বাজারে চায়ের ভালো দর না পাওয়ায় এ চা বাগানে লোকসান দিতে হচ্ছে।

নোয়াপাড়া চা বাগানের ডেপুটি ম্যানাজার সোহাগ মাহমুদ বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চা বাগানে নিয়মিত শ্রমিকদের রেশন, তলবসহ যাবতীয় খরচ মেটানো হয়।

নিলামে উৎপাদিত চা বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য খরচ মেটানো হয়। কিন্তু চায়ের দর কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণসহ অন্যান্য খরচ বহন করা বাগানের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

সুরমা চা বাগানে ২০২১ সালে ১৪ লাখ ৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন করা হয়েছে। ২০২০ সালে উৎপাদন করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৪৫ হাজার কেজি।

২০২১ সালে ৬৩ হাজার কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছিল। উৎপাদন বেশি হলেও নিলামে বাজার দর ভালো পাওয়া যায়নি।

সুরমা চা বাগান ব্যবস্থাপক আবুল কাসেম জানান, গত ৪/৫ বছর ধরে চায়ের ভালো দর পাওয়া যাচ্ছে না। মহামারি করোনার মধ্যে চায়ের দর আরও কমেছে।

বাজারে প্যাকেটজাত চা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। অথচ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের দর ১৫০ থেকে ২০০ মধ্যে।

বাগানে শ্রমিকের মজুরি, রেশন ও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে চায়ের নিলাম দর বাড়ছে না।

একই অবস্থা জগদীশপুর চা বাগান ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০২১ সালে এপ্রিল-মে মাসে চা বাগানগুলো প্রচণ্ড খরার মধ্যে পড়ে।

এর পরও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুণ। কিন্তু নিলামে বড় সিন্ডিকেটের কারণে চায়ের ভালো দর পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকার প্রতি কেজি চা কমপক্ষে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিলে চা শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিবছর লোকসানের মধ্যে পড়ে বাগানগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

এ ছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে সরকার সহজ শর্তে স্বপ্ল সুদে ঋণ দিলে বাগানগুলোর ওপর চাপ কমবে।

 

 

কলমকথা/সাথী